Sunday, 18 February 2018

আম



















আম (ইংরেজি: Mango ) ভারতীয় উপমহাদেশীয় এক প্রকারের সুস্বাদু ফল।[২] কাঁচা অবস্থায় রং সবুজ এবং পাকা অবস্থায় হলুদ রং হয়ে থাকে। আম ভারতের জাতীয় ফল হিসাবে পরিচিত। বাংলাদেশ এবং ভারতে যে প্রজাতির আম চাষ হয় তার বৈজ্ঞানিক নাম Mangifera indica। এটি Anacardiaceae পরিবারের সদস্য।[৩] তবে পৃথিবীতে প্রায় ৩৫ প্রজাতির আম আছে। আমের বিভিন্ন জাত আছে[৪], যেমন ফজলি, ল্যাংড়া, গোপালভোগ, খিরসা, অরুনা, আম্রপালি, মল্লিকা, সুবর্নরেখা, মিশ্রিদানা, নিলাম্বরী, কালীভোগ, কাঁচামিঠা, আলফানসো, বারোমাসি, তোতাপূরী, কারাবাউ, কেঊই সাউই, গোপাল খাস, কেন্ট, সূর্যপূরী, পাহুতান, ত্রিফলা, হাড়িভাঙ্গা, ছাতাপরা, গুঠলি, লখনা, আদাইরা, কলাবতী ইত্যাদি। ভারতের মালদহ , মুর্শিদাবাদ-এ প্রচুর পরিমাণে আম চাষ হয়ে থাকে। আম গাছকে বাংলাদেশের জাতীয় গাছের প্রতীক হিসেবে নেওয়া হয়েছে।[তথ্যসূত্র প্রয়োজন]বাংলাদেশের চাঁপাইনবাবগঞ্জে আম চাষ বেশি পরিমাণে হয়ে থাকে।আমকে বলা হয় ‘ফলের রাজা’।

পরিচ্ছেদসমূহ

আম গাছ

আম গাছ সাধারণত ৩৫-৪০মি: (১১৫-১৩০ ফিট) লম্বা এবং সর্বোচ্চ ১০মি: (৩৩ ফিট) ব্যাসার্ধের হয়ে থাকে। আম গাছ বহু বছর বাঁচে, এর কিছু প্রজাতিকে ৩০০ বছর বয়সেও ফলবতী হতে দেখা যায়। এর প্রধান শিকড় মাটির নীচে প্রায় ৬মি: (২০ ফিট) গভীর পর্যন্ত যায়। আম গাছের পাতা চিরসবুজ, সরল, পর্যায়ক্রমিক, ১৫-৩৫ সে.মি. লম্বা এবং ৬-১৬ সে.মি. চওড়া হয়ে থাকে; কচি পাতা দেখতে লালচে-গোলাপী রং এর হয়। আমের মুকুল বের হয় ডালের ডগা থেকে, মুকুল থেকে শুরু করে আম পাকা পর্যন্ত প্রায় ৩-৬ মাস সময় লাগে।

চাষাবাদ ও ব্যবহার


একটি আম গাছ
ভারতীয় উপমহাদেশে আম কয়েক হাজার বছর ধরে চাষাবাদ চলছে,[৫] পূর্ব এশিয়াতে আমের প্রচলন হয় খ্রিস্টপূর্ব ৫ম-৪র্থ শতাব্দী থেকে এবং চাষাবাদ শুরু হয় আরো পরে খ্রিস্টাব্দ ১০ম শতাব্দী দিকে[৫]। ভারতীয় উপমহাদেশ এবং পূর্ব এশিয়ার কিছু দেশের পর পৃথিবীর অন্য যেসব দেশে ভারতীয় উপমহাদেশের মত জলবায়ু রয়েছে, যেমন: ব্রাজিল, ওয়েস্ট ইন্ডিজ বা মেক্সিকোতে আরো অনেক পরে আমের প্রচলন ও উৎপাদন শুরু হয়।[৫] মরোক্কোর পর্যটক ইবনে বতুতা ১৪ শতকে আমের বর্ণনা লিপিবদ্ধ করেন।[৬]
বর্তমানে পৃথিবীর প্রায় সমস্ত উষ্ণ প্রধান জলবায়ুর অঞ্চল গুলিতে আমের চাষাবাদ হয়। এর মধ্যে অর্ধেকের কাছাকাছি আম উৎপাদন হয় শুধুমাত্র ভারতেই[৭][৮][৯]। এর পর অন্যান্য যেসব দেশ আম উৎপাদন করে তার মধ্যে আছে চীন, বাংলাদেশ, পাকিস্তান, অস্ট্রেলিয়া, উত্তর-দক্ষিণ ও মধ্য আমেরিকা, দক্ষিণ-পশ্চিম ও মধ্য আফ্রিকা প্রভৃতি। আম খুব উপকারী ফল।
বাংলাদেশে চাঁপাইনবাবগন্জ জেলা আমের জন্য বিখ্যাত। "কানসাট আম বাজার" বাংলাদেশ তথা এশিয়া মহাদেশের সবচেয়ে বৃহৎ আম বাজার হিসেবে পরিচিত। মকিমপুর, চককির্ত্তী, লসিপুর, জালিবাগান, খানাবাগান সহ বিশেষ কিছু জায়গায় অত্যান্ত সুস্বাদু এবং চাহিদা সম্পুর্ন আম পাওয়া যায়।

বাংলাদেশে আম পাকার সময়

আমের নাম পরিপক্বতার সময়
গোবিন্দভোগ ২৫শে মের পর থেকে
গোলাপখাস ৩০শে মের পর থেকে
গোপালভোগ ১লা জুনের পর থেকে
রানিপছন্দ ৫ই জুনের পর থেকে
হিমসাগর বা ক্ষীরশাপাত ১২ই জুনের পর থেকে
ল্যাংড়া ১৫ই জুনের পর থেকে
লক্ষ্মণভোগ ২০শে জুনের পর থেকে
হাড়িভাঙ্গা ২০শে জুনের পর থেকে
আম্রপালি ১লা জুলাই থেকে থেকে
মল্লিকা ১লা জুলাই থেকে থেকে
ফজলি ৭ জুলাই থেকে থেকে
আশ্বিনা ২৫শে জুলাই থেকে

ঔষধিগুন

আয়ুর্বেদ ও ইউনানি পদ্ধতির চিকিৎসায় পাকা ফল ল্যাকজেটিভ, রোচক ও টনিক বা বলকারকরূপে ব্যবহৃত হয়। রাতকানা ও অন্ধত্ব প্রতিরোধে পাকা আম এমনকি কাঁচা আম মহৌষধ। কচি পাতার রস দাঁতের ব্যাথা উপশমকারী। আমের শুকনো মুকুল পাতলা পায়খানা, পুরনো অমাশয় এবং প্রস্রাবের জ্বালা-যন্ত্রনা উপশম করে। জ্বর, বুকের ব্যথা, বহুমূত্র রোগের জন্য আমের পাতার চূর্ণ ব্যবহৃত হয়।

ব্যবহার

ফল হিসেবে খাওয়ার পাশাপাশি আম থেকে চাটনি,আচার,আমসত্ত্ব, মোরব্বা,জ্যাম,জেলি ও জুস তৈরি হয়।

পুষ্টিগুন

স্বাদে, পুষ্টিতে ও গণ্ধে আম অতুলনীয়। তাই আমকে বলা হয় ফলের রাজা । আমে প্রচুর ভিটামিন ‘এ’ বা ক্যারোটিন, ভিটামিন ‘সি’, খনিজ পদার্থ ও ক্যালোরি রয়েছে ।ভিটামিন ‘এ’ এর দিক থেকে আমের স্থান পৃথিবীর প্রায় সব ফলেরই উপরে ।

No comments:

Post a Comment